মৌসুমের প্রায় দুই মাস পর ভোলার জেলেদের জালে কাঙ্খিত রুপালি ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এতে করে সরগরম হয়ে উঠছে ভোলার মাছঘাটগুলো। তবে জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে এখনো ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। গত তিন-চার দিন ধরে সাগর মোহনায় জেলেদের জালে কিছু ইলিশ ধরা পড়লেও সেগুলো আকারে ছোট হওয়ায় হতাশ জেলেরা।
সরেজমিন ভোলার মেঘনা নদী তীরবর্তী ইলিশা, তুলাতুলি, নাছির মাঝি, ভোলার খাল মাছঘাট ঘুরে দেখা যায়, মাছঘাটগুলো সরগরম হতে শুরু করেছে। ব্যস্ততা বেড়েছে মাছঘাটের আড়তদার ও জেলেদের। ভোলার খাল মাছঘাট এলাকার জেলে সিদ্দিক মাঝি বলেন, মৌসুমের শুরুতে কয়েক মাস নৌকা নিয়ে নদীতে নেমে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। নৌকার জ্বালানি ও ভাগিদারের খাওয়ার খরচের টাকাই ওঠেনি। এতে অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
তুলাতুলি মাছঘাটের বশির মাঝি বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে নদীতে ইলিশের দেখা নেই। সাগরে কিছু মাছ পড়তে শুরু করলেও তা আকারে ছোট (জাটকা)। এগুলো বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্য দিকে মহাজনের দাদনের টাকা আর এনজিওর ঋণের কিস্তি পরিশোধেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার মোহাম্মদ নেয়াব বলেন, ঢাকার পাইকারদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা অগ্রিম এনে জেলেদের দাদন দিয়েছি। লকডাউনের করণে ঢাকার পাইকারদের মাছ পাঠাতে পারিনি; কিন্তু কী করব, নদীতে জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না। এখন সাগরে কিছু জেলের জালে মাছ পড়ছে; কিন্তু তা আকারে ছোট। ঢাকার পাইকারদের চাহিদা পূরণ না করতে পেরে খুবই বিপাকে রয়েছি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে দুই মাস আগে। সে অনুযায়ী নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা; কিন্তু অন্য কয়েকটি জেলায় কিছু কিছু মাছ পড়লেও ভোলার নদীতে এখনো ইলিশ ধরা পড়ছে না।
ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জামাল হোসাইন জানান, ডুবোচরের কারণে নদীতে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা না পড়লেও সাগরে জেলেদের জালে কিছু ইলিশ ধরা পড়ছে। আশা করছি, আগামী মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টি বেশি হলে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে।
এদিকে ভোলা জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুম শেষ হতে চলেছে। ডুবোচর ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে নদীতে মাছ কিছুটা কম। তবে সাগরে তুলনামূলক মাছ ধরা পড়ছে। আগামী মাসের শুরুর দিকে জেলেরা নদীতে অনেক বেশি ইলিশ পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।
উল্লেখ্য, দ্বীপ জেলা ভোলায় প্রায় দুই লাখ জেলে নদীতে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলে আছেন এক লাখ ৩৯ হাজার। মৎস্য বিভাগের মতে, দেশের ইলিশের চাহিদার প্রায় ২৫ ভাগ ভোলা থেকেই পূরণ হয়। ইলিশের এই আয় দিয়ে অনেকটা সচল থাকে ভোলার ২২ লাখ মানুষের অর্থনীতির চাকা।
Leave a Reply